সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন: সুরমা মার্কেটের দোকানসহ পারিবারিক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলচেষ্টার অভিযোগ
সিলেট নগরীর সুরমা মার্কেটের দোকানপাঠ ও দক্ষিণ সুরমায় বাবার ভাগ করে দিয়ে যাওয়া সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করছেন অপর ভাই ও তাদের সন্তানরা। এ জন্য প্রাণে মারার হুমকিসহ অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা, নগরীর সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ী ও সালিশ ব্যক্তিত্ব মরহুম হাজী আনা মিয়ার মেয়ে মমতা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাদের ভাইদের কয়েকজন ও তাদের লেলিয়ে দেওয়া লোকজনের কারণে আজ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। তারা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকি ও প্রাণে মারা ভয় দেখাচ্ছে। তাই আইনের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীকে জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলন করছি।’
তিনি জানান, তার বড় ভাই আব্দুল খালিক যুবক বয়স থেকে বিপথগামী হওয়ায় বাবা জীবদ্দশায় তাকে বাড়িতে উঠতে দেননি। তিনি এবং সৎ মা খয়রুন নেছা, ভাই মুজিবুর রহমান, জামাল আহমদ, নিজাম আহমদ, আব্দুস শুকুর, হাসান আহমদকে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল পানিছড়া এলাকায় ৮০ শতক জায়গা কিনে বাড়ি করে দেন। যাতে ধরাধর পুরের সম্পত্তি ও সুরমা মার্কেটের দোকানকোঠায় দাবি করতে না পারেন। তারা বর্তমানে ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন।
মমতা বেগম আরও জানান, পুরোনো বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ছোট ভাই আব্দুল হাই পারভেজ, আব্দুল কাদির জাহেদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মোক্তাদির ও আমার মা সিতারা বানুকে রেজিস্ট্রারি করে দিয়ে যান তার বাবা। আর সুরমা মার্কেটের দোকানকোঠার মালিকানায় রয়েছেন ছোট ভাই আব্দুল হাই পারভেজ ও আব্দুল কাদির জাহেদ। এ কারণে আব্দুল মোক্তাদির তাদের দুজনের দোকানকোঠার দখল নেওয়ার চেষ্টায় বড় ভাই আব্দুল খালিক ও তার সন্তান এবং সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশে থেকে ছোট ভাই আব্দুল মোক্তাদির বাবার সম্পত্তি একাই গ্রাস করার চেষ্টায় লিপ্ত। তিনি নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে মরহুম বাবাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। দোকানের দখল নিতে শ্বশুড়ের নামে জাল দলিল তৈরি করেছেন মুক্তাদির।
মমতা বেগম বলেন, ‘ভাই মুক্তাদির খুবই চতুর প্রকৃতির লোক। দেশে থাকা সৎ ভাইদেরও টাকা পয়সা দিয়ে এতোদিন ব্যবহার করেছিলেন। যদিও তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু মুক্তাদির ও বড় ভাই আব্দুল খালিক এবং তার সন্তানরা থেমে নেই। তারা নানাভাবে ছোট ভাই পারভেজ ও জাহেদকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বোন হিসেবে এ নিয়ে আমি শঙ্কিত।’
স¤প্রতি বাড়িতে মেরামতের জন্য পুরাতন ঘর ভাঙা হলে সেগুলো ছবি সংগ্রহ সেসব সেগুলো ফেসবুকে ও নামসর্বস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টালে দিয়ে চুরি—ডাকাতির ঘটনা বলে অপপ্রচার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এতে আমি ও আমার মরহুম বাবা এবং ভাই—বোনদের মানহানী হচ্ছে।’
মমতা বেগম বলেন, ‘আমার বাবার মালিকানাধীন বসতবাড়ি ছাড়াও নগরীর সুরমা মার্কেটে দোকানকোঠা রয়েছে। বাবার প্রথম সংসারে আমরা ৪ ভাই, সাত বোন রয়েছি। দ্বিতীয় সংসারের রয়েছেন ৫ ভাই। বাবা জীবিত থাকাবস্থায় সম্পত্তির দখল নেওয়ার চেষ্টা করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছোট ভাই আব্দুল মোক্তাদির। দেশে অবস্থানরত বড় ভাই আব্দুল খালিক ও তার ছেলে টিপু সওদাগর, শিপু সওদাগর, সানি সওদাগর ছাড়াও অন্য ভাই এবং তাদেরও সন্তানদের ফুসলিয়ে একত্রিত করে বাড়ি ও দোকানকোঠার দখল নিতে চেষ্টা চালায় সে। তখন ভাইদের রোষানল থেকে রক্ষায় বাবার পাশে দাঁড়ায় আমার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছোট ভাই আব্দুল হাই পারভেজ ও আব্দুল কাদির জাহেদ।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছোটভাই আব্দুল হাই পারভেজ দেশে অবস্থানকালে আমার বাবা জীবদ্দশায় গত বছরের ১ জুলাই সুরমা মার্কেটের দোকানে যান। ওইদিন যুক্তরাজ্যে থাকা আব্দুল মোক্তাদিরের প্ররোচনায় মার্কেটে অবস্থানরত আমার বড় ভাই আব্দুল খালিক ও তার ছেলেরাসহ সন্ত্রাসী দিয়ে দোকানের দখল ছাড়তে হুমকি দেন এবং ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।’
‘এ ঘটনায় বাবা নিজে বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে কতোয়ালি মডেল থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর তিনি মারা গেলে ৩ থেকে ৪ মাস পর আব্দুল মোক্তাদির, আব্দুল খালিক ও তার ছেলে টিপু, শিপু এবং সানি সওদাগরসহ আমার বাবার বাড়িতে এসে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তারা মাদকদ্রব্য ও চোরাই মোটরসাইকেল রেখে আমাদেও ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমি ও আমার স্বামী সুফের আহমদ চৌধুরী দক্ষিণ সুরমা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’— যোগ করেন তিনি।
বড় ভাই আব্দুল খালিকের মদ, জুয়াসহ নানাবিদ অপরাধ স¤্রাজ্যের সাথে যুক্ত উল্লেখ করে মমতা বেগম বলেন, ‘ভাইয়ের ছেলে টিপু ও সানি সওদাগর অপরাধ জগতে পা বাড়িয়েছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জালজালিয়াতি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ অবস্থায় বিদেশে বসে আব্দুল মুক্তাদির টাকার প্রভাবে তাদের দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের শেল্টার দিচ্ছেন। তাদের হুমকির কারণে প্রতিনিয়ত আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি।’ এসব বিষয়ে তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং অপরাধীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
Related News
চার মামলায় খালাস পেলেন ‘শিশুবক্তা’ মাদানী
তেজগাঁও, মতিঝিল, পল্টন ও গাজীপুরের গাছা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা পৃথক চার মামলায়Read More
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরা”ই পণ্যের চালান জব্দ
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরাই পণ্যের চালান জব্দ করেছে টাস্কফোর্স। সোমবার (৫Read More