Main Menu

মিয়ানমারের মাইনে পা হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন বাংলাদেশি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পা হারানো বাংলাদেশি তরুণ উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে আহত হন তিনি।

উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যানপাড়া এলাকার অং কিউ থাইং তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তুমব্রু হেডম্যানপাড়া সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলার সংলগ্ন ৩০০ মিটার মিয়ানমার অভ্যন্তরে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়। এতে তার বাঁ পায়ের গোড়ালি উড়ে যায়। প্রথমে তাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে চমেকের ২৬ নম্বর অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডের ৩২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে গিয়ে দেখা যায়, পা হারানোর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা। পাশে বসে তার দেখাশোনা করছেন বৃদ্ধা মা ইয়াং মে তঞ্চঙ্গ্যা। পাশে বসে আছেন চাচা ইসা মং তঞ্চঙ্গ্যা।

ছেলের চিকিৎসার অবস্থা জানিয়ে ইয়াং মে তঞ্চঙ্গ্যা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছি। বড় ছেলে উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা কৃষিকাজ করে আয় দিয়ে সংসার চালায়। ছোট ছেলে অমরণ তঞ্চঙ্গা লেখাপড়া করছে। আমার পরিবারের সব দায়িত্ব বড় ছেলের কাঁধে। ছেলে এখন হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমাদের জীবন সংগ্রাম থেমে গেছে। খুব অসহায় লাগছে।’

আহত-বাংলাদেশিচমেকের ২৬ নম্বর অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডের ৩২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আহত বাংলাদেশি

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে গরু আনতে সীমান্তে গিয়ে মিয়ানমারের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয় ছেলে। এতে পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কীভাবে এখন আমার সংসার চলবে তা বুঝে উঠতে পারছি না। ছেলের চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা ভর করেছে আমার ওপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়। গত কিছুদিন ধরে মিয়ানমারে গুলাগুলি চলছে। আমরা সীমান্তের বাসিন্দারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। কবে আমাদের আতঙ্ক কাটবে জানি না।’

উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যার চাচা ইসা মং তঞ্চঙ্গ্যা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আহতের পর আমরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দুটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর চমেক হাসপাতালে আনা হয়। শনিবার রাতে পায়ের অপারেশন হয়েছে। এখন যন্ত্রণায় ছটফট করছে, কিছুক্ষণ পরপর কান্না করছে। তার চিকিৎসা খরচ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’

চিকিৎসাধীন উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেদিন আমাদের গরুগুলো আনতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আরও তিন জন ছিল। সীমান্তের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ মাইনের মধ্যে পা পড়ে যায়। এতে বিস্ফোরণ ঘটে পা হারাই। আমার বাড়ি সীমান্তের কাছাকাছি। আমরা প্রায় সীমান্ত এলাকায় যাই। এরকম কখনও হয়নি। কেউ মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছে তাও শুনিনি। সঙ্গে থাকা তিন জন আমাকে উদ্ধার করে স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে এনেছিল।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে আহত যুবকের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যাতে সেখানে ইনফেকশন দেখা না দেয় সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাকে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি আমরা। ওই যুবক এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হবে।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *