Main Menu

জননেতা এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী: এক ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ, এম আহমদ আলী

এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী এক ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ । তার সাথে আমার পরিচয় দক্ষিণ সুরমার কদমতলীস্থ মরহুম জননেতা শ্রদ্ধেয় আব্দুল হামিদের বাড়ীতে। এর পর থেকে তার স্নেহ ভালবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। ২০১৫ সাথে আমি ও ইকবাল ভাই হজ্বব্রত পালনে সৌদি আরবে যাই। সেখানে ও তিনি আমাকে যে আন্তরিকতার পরিচয় দেখিয়েছেন তা স্মৃতিপটে আজও ভেসে উঠে। একজন নিরহংকার ভাল মানুষ আমাদের ছেড়ে বড় অবেলা চলে গেলেন। এটা বেদনা দায়ক। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা এটাকে আমাদের মেনে নিতেই হবে। এটাই নিয়তি।
ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ জননেতা এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. মুহিবুর রহমান চৌধুরী ও মাতার নাম জুবেদা খাতুন চৌধুরী।
১৯৫০-৬০ এর দশকে প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতম ইকবাল আহমদ চৌধুরী। ১৯৬২ সালে আইয়ুব শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৬৯-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির নেতা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন । সংগ্রামী পথ ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দের বন্ধুত্বে-ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। অসাধারণপ্রতিভার অধিকারী, মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ,শিক্ষানুরাগী, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি সিলেট জেলা বারে আইন পেশায় ব্রত হন। তিনি জীবদ্দশায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি)’র বার্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ইচ্ছে করলেই ষাটের দশকে রাজধানী ঢাকা শহরে চাকচিক্যময় জীবন উপভোগ করতে পারতেন, সেই সুযোগ ও সম্ভাবনা তাঁর ছিল। কিন্তু লালিত স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞার প্রতি সম্মান দেখাতেই নিজের জীবন নিবেদিত করেছেন সমাজপ্রগতি ও মানুষের কল্যাণে। অবদান রেখে চলেছেন বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও মানবকল্যাণমূলক কাজে। সিলেটে এমন কোনো মানবকল্যাণমুখী সামাজিক প্রতিষ্ঠান নেই যার সঙ্গে তিনি শীর্ষ পর্যায়ে জড়িত নন।
১৯৯৮ সালে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের প্রয়াসে নিজেকে নিবেদিত করেন ‘নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তা ও পরিচালক হিসেবে, যেখানে স্বল্প খরচে ছাত্র-ছাত্রীরা এমবিবিএস পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে পাচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষানুরাগী ও মধ্যবিত্তের উচ্চশিক্ষা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০১২ সালে ‘নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি) প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং দরিদ্র অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ। তিনি নর্থ ইস্ট নার্সিং ইনস্টিটিউট (সিলেট) এর উদ্যোক্তা ও পরিচালক, এম.সি একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ( গোলাপগঞ্জ) এর কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য, রামকৃষ্ণ মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (সিলেট) এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও দাতা সদস্য, বরায়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং বরায়া উত্তরবাগ দাখিল মাদ্রাসা ( গোলাপগঞ্জ) এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, দি এইডেড হাই স্কুল (সিলেট) এর সাবেক সভাপতি ও আজীবন দাতা সদস্য এবং মুহিবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (রফিপুর, গোলাপগঞ্জ) এর প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি সিলেট জেলা যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর আজীবন সদস্য ও সহ-সভাপতি, জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতি (সিলেট) এর আজীবন সদস্য ও সহ-সভাপতি, সিলেট ডায়াবেটিকস অ্যাসোসিয়েশন-এর আজীবন সদস্য ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (সিলেট জেলা শাখা) এর আজীবন দাতা সদস্য, বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট অঞ্চল, সিলেট এর সাবেক সভাপতি ও পরিচালনা পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ স্কাউটস (সিলেট অঞ্চল) এর আঞ্চলিক নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, জননেতা আব্দুল হামিদ স্মৃতি সংসদ (সিলেট) এবং জেলা মৎস্য চাষী সমিতি (সিলেট) এর সভাপতি। তিনি২০০৯.২০১৩ ও ২০১৯ সালে নির্বাচিত হয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ‘একটি বাড়ি-একটি খামার’ বিষয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনবার। ২০১৫ সালে তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্কাউটস-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক ‘রৌপ্য ইলিশ’ এবং বাংলাদেশ স্কাউট কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কর্তৃক ২০১১ সালে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারক এবং একই সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি কর্তৃক বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আজীবন সেবা স্বীকৃতি সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। স্ত্রীর মৃত্যু, দুই সন্তানের অকাল মৃত্যুর শোক আর বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে তিনি আক্রান্ত হয়ে জীবনের অন্তিম সময় টুকু ও জনগণের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে দুই নাতির সাথে তিনি জীবন কাটান।
গত ২৯ জানুয়ারি শনিবার রাত ১২টা ২০মিনিটে নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ৩১ জানুয়ারি সোমবার মরহুমের প্রথম জানাজা সকাল ১১টা ৪৫মিনিটে সোবহানীঘাট মৌবন জামে মসজিদে,দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.)জামে মসজিদে এবং তৃতীয় জানাজা, বাদ আসর গোলাপগঞ্জ এম. সি একাডেমী মাঠে অনুষ্ঠিত হয়, এর আগে বেলা আড়াইটায় তাঁর মরদেহ দীর্ঘদিনের কর্মস্থল গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় এবং পরে গোলাপগঞ্জের রফিপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।- আমিন।

লেখক- সাংবাদিক






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *