এমসি কলেজ ছাত্র অপহরণ-হত্যার চেষ্টা: ৭ আসামির রিমাণ্ড মঞ্জুর
সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্র অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা মামলায় ৭ আসামির রিমাণ্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে ৭ আসামিকে হাজির করে ৫ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক শারমিনা সুলতানা নীলা আসামিদের দুই দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
রিমাণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মুহিবুর রহমান (৩৫), আনিসুর রহমান (৩০), সোবহান মিয়া (৬৫), রফিকুল ইসলাম মোড়ল (৪৫), আব্দুল খালিক (৪৫), আব্দুর রহিম বাবু (৫০), সিরাজুল ইসলাম সিরাই (৪৫)।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সিলেট এমসি কলেজের বিএসএস ১ম বর্ষের ছাত্র সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের বড়ফৌদ গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে নজির আহমদ মোজাহিদকে (২৪) অপহরণ করে হত্যা চেষ্টা করা হয়। ওই কলেজ ছাত্র নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনাটি আড়াল করতে মামলায় আসামি দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করেন আসামি পক্ষ। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন ওই কলেজ ছাত্র। মামলার আসামিরা গত বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে আসামিদের রিমাণ্ড আবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট প্রেস্ক্লাবে এব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযােগ করেন সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের বড়ফৌদ গ্রামের মো. ফয়জুল হকের ছেলে এবং এমসি কলেজে বিএসএস পাস কোর্সের ছাত্র নজির আহমদ মোজাহিদ।
লিখিত বক্তব্যে মোজাহিদ বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১০টার দিকে বড়ফৌদ পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মক্তবঘর এলাকায় সালিশের কথা বলে এলাকার রাজা মিয়াকে দিয়ে তাকে ডেকে নেয়া হয়। সালিশে উপস্থিত ছিলেন এলাকার রফিকুল ইসলাম মড়ল (৪০), আফতাব উদ্দিন (৪২), আব্দুর রহিম বাবু (৫০), বশির (৫৫), সুরুজ আলী (৫৭), সুবহান (৬০), সুনান (৫০), ইছমত (৫৫), খালিক (৫৫), মুহিবুর রহমান (৪০), আনিছুর রহমান আয়নিছ (৪৫), আয়নুল হক (৫৫), নুর মিয়া (৬০), সুরুজ আলী (৫৫), রাজা মিয়া (৫৫), সিরাই (৪৫)। সবাই সালিশের নামে অস্ত্রহাতে ছিল।
তিনি বলেন, সেখানে যাওয়ার পরপরই তাকে ঘেরাও করে অপহরণ করা হয়। সবাই মিলে তাকে মারধর করে গ্রাম পার করে হাওর এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর হত্যার জন্য মুহিব, আয়নিছ, খালিক নামে ৩ জনের হাতে তুলে দেয়। তারা হাওরের মাঝখান দিয়ে কমপক্ষে ২ কিলোমিটার জায়গা হাঁটিয়ে রাত ১১ টার দিকে স্থানীয় চেঙেরখালের শাখা ভাদেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে ছুরি ও বস্তা ছিল।
সেখান থেকে বেঁচে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা যখন হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন তিনি নদীতে লাফ দেন। তাকে ধরতে তারাও নদীতে পড়ে কিন্তু সাঁতার কেটে তার সঙ্গে পেরে ওঠেনি। তিনি নদী পার হয়ে ইউনিয়নের দখড়ি গ্রামে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তার ভাই পুলিশকে ঘটনাটি জানালে শিবেরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ রাজা মিয়াকে আটক করে। রাজা মিয়া পুলিশকে অপহরণের বিষয়ে তথ্য দিলেও তাকে আটক না রেখে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর শিবেরবাজার ফাঁড়িতে বিষয়টি ফোন দিয়ে জানালে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসার পর অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করলেও এক পুলিশ সদস্য এজাহার লিখে দেন যেখানে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুর উল্ল্যেখ নেই। এজাহারে মুল ঘটনাকে তিনি ভিন্নখাতে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন মোজাহিদ।
তিনি বলেন, পরিকল্পিত সালিশের নামে তাকে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। মূলত, ইউনিয়নে আতাউরের সঙ্গে লেনদেনের বিচার থেকে শুরু করে সালিশে থাকা লোকজনের সঙ্গে আতাউর, রাজা মিয়াও অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত ছিল।
Related News
চার মামলায় খালাস পেলেন ‘শিশুবক্তা’ মাদানী
তেজগাঁও, মতিঝিল, পল্টন ও গাজীপুরের গাছা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা পৃথক চার মামলায়Read More
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরা”ই পণ্যের চালান জব্দ
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরাই পণ্যের চালান জব্দ করেছে টাস্কফোর্স। সোমবার (৫Read More