Main Menu

ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। আর এই ফলের সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। আর এই জাতীয় ফলের রকমও রয়েছে বেশ কয়েকটি। এদের মধ্যে বাংলাদেশে বেশিরভাগ পাওয়া যায় খাজা, আদারসা ও গালা জাতের কাঁঠাল। তবে উন্নত ফলনশীল ও বারোমাস কাঁঠাল পেতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি কাঁঠাল-১ ও বারি কাঁঠাল-২ জাত উদ্ভাবন করেছেন। আর এসব জাতের কাঁঠালের বাইরেও একটি জাত রয়েছে। যা কখনো আমাদের মাটিতে চাষ করা হয়নি। আর ওই জাতটি হলো ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল। দেখতে বেশ সুন্দর এই কাঁঠালের চাষ বাংলাদেশেও সম্ভব বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদপ্রেমী খান মোহাম্মদ সবুজ। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনামের জনপ্রিয় লাল কাঁঠালের চারা এনে রোপণ করে সফলও হয়েছেন তিনি। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খান মোহাম্মদ সবুজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, কৃষিতে একটু আন্তরিক হলে বাংলাদেশে অনেক কিছুই চাষ করা সম্ভব। ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল দেখতে অনেক সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু। লাল কাঁঠাল চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। এতে আয়ও হবে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউড (বারি) মহাপরিচালক ডক্টর নাজিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি কাঁঠাল চাষের উপযোগী। আর এ কারণে যেকোনো দেশের জাত এখানে চাষ করা সম্ভব। কাঁঠালের অনেক জাত রয়েছে। জাত অনুযায়ী ফলন একেক রকম, স্বাদেও ভিন্নতা থাকে। তবে কাঁঠালর স্বাদ ঠিক রাখতে হলে জিন ঠিক রাখতে হয়। কাঁঠাল কোনো দেশের বা অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত নয়। এমনকি কোনো সময়ের জন্যও নির্দিষ্ট নয়। কাঁঠালের জাত ট্রান্সবাউন্ডারি হতে পারে। এক মহাদেশের জাত অন্য মহাদেশে আসা-যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বাইরের কোনো দেশের জার্মপ্লাজম এসে আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করলে সেটা ভালো। তবে জাত বা জার্মপ্লাজম আমদানি প্রপারলি না করা হলে অনেক সময় রোগব্যাধি ঢুকে পড়ে।

তিনি বলেন, কিছু কিছু ফসল আছে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল বা নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কাঁঠালের ক্ষেত্রে তা হয় নয়। বাংলাদেশের ফসলও অনেক দেশে জনপ্রিয়। কিন্তু তা মিডিয়ায় তেমন প্রচারণা নেই। যেমন নেপালে আমাদের অনেক ফসলের জাত নিয়ে চাষাবাদ করছে। যা ওখানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এদিকে বর্তমানে দেশে উচ্চফলনশীল জাতের কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এ ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের কাঁঠালের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল। ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল সারা বছর ফল দিয়ে থাকে। বড় হলে কাঁঠালের উপরে ভিতরে সব জায়গাতেই লাল টকটকে রঙ হয় এবং ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। ভিয়েতনামী এই লাল কাঁঠাল দেখতে এতোটাই সুন্দর যে, শুধু খাওয়ার লোভ হয়। এর ইংরেজি নাম Gac Baby Jackfruit। এই কাঁঠালের আকারে কিছুটা ছোট হয়। লাল কাঁঠাল কেবল কোয়া বা কোষে ঠাসা থাকে। ফল অতি সুস্বাদু, মিষ্টি এবং রং-বেরঙের (গোলাপী, লাল) হয়। সাধারণ মানের কাঁঠালের চেয়ে দাম তিন থেকে চারগুণ বেশি। এর অন্যতম সুবিধা হলো এই জাতের কাঁঠালের বাগানে খরচ কম, লাভ বেশি। এর একটা বারোমাসি জাতও রয়েছে। তা লাগানো হলে বারোমাস ধরে ফল পাওয়া যায়।

ভিয়েতনামী লাল কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় এ কাঁঠাল খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। ১০০ গ্রাম লাল কাঁঠালে ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে। এ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন সি-ও রয়েছে। রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। যা আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ সক্ষম। এ কাঁঠালে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট। যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। বদহজম রোধ করে লাল কাঁঠাল। কাঁঠালে আছে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ। যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লাল কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে। লাল কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ভিয়েতনামী এই লাল কাঁঠাল ছাদেও চাষ করা সম্ভব। বর্ষায় বা বৃষ্টিতে পানি জমে না এমন উঁচু ও মাঝারি সুনিষ্কাষিত উর্বর জমি লাল কাঁঠালের জন্য উপযোগী। কাঁঠালের বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। তবে ছাদ বাগানের জন্য কলমের চারা উত্তম। এতে ফলন দ্রুত হয় এবং জমিতে চাষের জন্য কলম ও বীজের চারা দুটিই হতে পারে। ভিয়েতনামী লাল কাঁঠাল গাছে মুচি আসার পর কাঁঠাল পাকতে ১২০-১৫০ দিন সময় লাগে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউড (বারি) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, আমরা কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফসল বা ফল নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছি। ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষের সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক।

বৃক্ষপ্রেমী খান মোহাম্মদ সবুজ বলেন, চীনের আমন্ত্রণে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে বনসাই বিষয়ক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দেশে ফেরার সময় মালয়েশিয়া যাই। আর ওই সময় মালয়েশিয়ায় লাল কাঁঠাল দেখে জাতটি দেশে আনার চিন্তা থেকেই জাত সংগ্রহ করি।

বর্তমানে খান মোহাম্মদ সবুজের বাগানে এখন দুই শতাধিক চারা রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, এ বছর ফলন হয়েছে। আর ওই ফলন দেখে একজন বৃক্ষপ্রেমী ১২ হাজার টাকায় ওই গাছটি কিনে নেন। সবুজের ওই ভিয়েতনামী লাল কাঁঠালের বাগান রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী আমবাগ এলাকায় অবস্থিত।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *