Main Menu

ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ মেনে চলতে হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্কঃ  করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের মানুষকে এই প্রাণঘাতী সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।’

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আগে দেওয়া এই ভাষণের বেশির ভাগজুড়েই ছিল করোনাভাইরাস সংক্রমণে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপের কথা। দেন সচেতনতামূলক নানা পরামর্শ। করোনাভাইরাস শনাক্ত, মানুষ ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও চিকিৎসা প্রস্তুতিরও বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর ভাষণে বাজার ব্যবস্থাপনা, নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে সচল রাখার দিকনির্দেশনাও রয়েছে। রেডিও-টেলিভিশনে এই ভাষণ একযোগে প্রচার করা হয়।

বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। শ্রদ্ধার স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানান জাতীয় চার নেতাকে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে বলেন, ‘এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়—সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ংকর ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। বাংলাদেশের ওপরও এই আঘাত আসতে পারে।

স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে জনসমাগম এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে জনস্বাস্থ্যর কথা বিবেচনা করে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনসমাগম হয় এমন সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব জেলায় শিশু সমাবেশ ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এটি এখন বিশ্বের ১৯৫ টির মধ্যে ১৬৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংকটে ধৈর্য ধরুন, নির্দেশনা মানুন

দেশবাসী এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যত দূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।’

করোনাভাইরাস-আক্রান্ত থেকে ফিরেছেন এমন প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।’

কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে জানিয়ে ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলার আহ্বান জানান। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে সরকার প্রধান বলেন, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। আক্রান্ত সিংহভাগই কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে। সে জন্য পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিতে হবে।

আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিতÿরাখবে।’
করোনা শনাক্ত ও চিকিৎসায় যে সব উদ্যোগ

স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সুরক্ষায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুত আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোভিড পরীক্ষার জন্য ১৩ হাজার কীট মজুত ছিল। আরও ৩০ হাজার কীট শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে। ঢাকায় ৮টি পরীক্ষা যন্ত্র আছে। আরও সাত বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুযোগ নেবেন না, মানবতার সময়

যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন কৃচ্ছ্র সাধনের সময়। যতটুকু না হলে নয়, এর অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুত করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন।’

সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরেও প্রচুর খাদ্যশস্য মজুত আছে। চলতি মৌসুমে আলু-পেঁয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের সময়ই মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার; মানবতা প্রদর্শনের।’

সংকটময় সময়ে সহনশীল এবং সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহের চেইন অটুট আছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রপ্তানিমুখী শিল্পে প্রণোদনা

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ তহবিলের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত গ্রাহককে ঋণ খেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে। রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। মোবাইলে ব্যাংকিং-এ আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেওয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনা মূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নিম্ন-আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভাসানচরে ১ লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিনা মূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা ও দেওয়া হচ্ছে।

করোনা ঠেকাতে যা করা হয়েছে

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুটি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনসহ সকল স্থলবন্দরের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৯৮১ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি এবং প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে।

সৌজন্যে প্রথম আলো।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *