Main Menu

যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ॥ ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব শাবি’র সমাবর্তন কাল

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন আগামীকাল বুধবার। বিশ^বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কাক্সিক্ষত এই সমাবর্তন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ^বিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা থাকবেন কথা সাহিত্যিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
১৯৯১ সালে শাবি’র একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দীর্ঘ ২৮ বছরে মাত্র দু’টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল প্রথম সমাবর্তন এবং এর ৯ বছর পর ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্যবৃন্দ অনেকবার চেষ্টা করলেও আয়োজন করতে পারেননি তৃতীয় সমাবর্তন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ১১তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়ে সমাবর্তন দ্রুত আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন সেই সমাবর্তন সফল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন। তৃতীয় সমাবর্তনে মোট ৬ হাজার ৭৫০ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে স্নাতকের ৪ হাজার ৬১৭ জন এবং স্নাতকোত্তরের ১ হাজার ১২৭ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া পিএইচডি ২ জন, এমবিবিএস ৮৭৮ জন, এমএস ও এমডি ৬ জন এবং নার্সিংয়ের ১২০জন শিক্ষার্থী। এদিকে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেয়া হবে। এর মধ্যে ১০ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও ৫ জনকে স্নাতকোত্তর ফলাফলের জন্য এবং দ্বিতীয় সমাবর্তনে বাদ থাকা ৫ জনকেও স্বর্ণপদক দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষদে প্রথম হওয়া ৮৯ শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে।
দীর্ঘ এক যুগ পর সমাবর্তন হওয়ায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে। সমাবর্তনকে সফল করতে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে, সম্প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন চলতি বছরের ডিসেম্বরে চতুর্থ সমাবর্তনের আয়োজন করা হবে।
সমাবর্তনকে সামনে রেখে বিশ^বিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে নতুন মোড়কে। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সমাবর্তনস্থল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে রং-বেরংয়ের পতাকা এবং মরিচবাতি লাগানো হয়েছে, গোলচত্বরকে নতুনভাবে মেরামত করা হয়েছে এবং ফুল গাছ লাগানো হয়েছে, বিভিন্ন ভবনের সামনে এবং উপরে টানানো হয়েছে সমাবর্তনের ব্যানার-ফেস্টুন। ভবনগুলোতে নতুন করে রং করা হয়েছে। মূল প্যান্ডেল ও স্টেইজের কাজ চলছে পুরোদমে।
সমাবর্তনকে কেন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে কস্টিউম, গিফট ও আমন্ত্রণপত্র বিতরণ এবং আজ মঙ্গলবারও দিনব্যাপী নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত কাউন্টার থেকে এসব জিনিস দেয়া হবে।
এদিকে, ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায় গতকাল সোমবার সকাল থেকে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বিশ^বিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে তাদের। নতুন গাউন ও হ্যাট পরিধান করে ছবি তুলে অনেকে ব্যস্ত সময় পার করেছে। অনেকে আবার তাদের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে একটি মিলনমেলায়।
সমাবর্তনের বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত সমাবর্তন। গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সমাবর্তন হচ্ছে সবচেয়ে বড় উৎসব। সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়রদের এক মিলনমেলার সৃষ্টি হয়। অনেক পুরনো বন্ধু, সহপাঠীর সাথে দেখা হয়। সবমিলিয়ে এক আনন্দঘন এবং আবেগপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে যেন নিয়মিত সমাবর্তন হয়-এটা আমাদের চাওয়া।’
একই বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত জাহান বলেন, ‘অনেক দিন পর শিক্ষক, ব্যাচমেট, সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে দেখা হবে এই ভেবে আনন্দ লাগছে। কাক্সিক্ষত এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। যারা আসতে পারবে না তাদেরকে খুব মিস করবো।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি একদম শেষ পর্যায়ে। সবকিছু সুন্দরভাবেই আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি কখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসবেন এবং শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকেট দিতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘চতুর্থ সমাবর্তন চলতি বছরের শেষের দিকে বিশেষ করে ডিসেম্বরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ এরপর প্রতিবছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সমাবর্তনের দিন বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ও ক্যাফেটেরিয়া খোলা থাকবে। অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদেরকে আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে বিকেল আড়াইটার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করতে হবে। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। সমাবর্তনে অবশ্যই নির্ধারিত আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে আনতে হবে। মোবাইল ফোন, হাত ব্যাগ, ব্রিফকেস, ছাতা ও পানির বোতল, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না। গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন অতিথি নিয়ে আসতে পারবেন। তবে, অতিথিদেরকে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে একাডেমিক ভবন ‘ই’ ও ‘আইআইসিটি’ ভবনে অবস্থান করতে হবে। সমাবর্তনের দিন সন্ধ্যায় এবং পরদিন বৃহস্পতিবার মূল সনদপত্র বিতরণ করা হবে। বিস্তারিত সমাবর্তনের ওয়েবসাইট (sustconvocation.edu) থেকে জানা যাবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *