মার্চ ফর গাজা: জনতার ঢল থেকে ইসরাইলের গণহত্যার বিচার দাবি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে আজ রাজধানীতে জনতার ঢল নেমেছিলো। মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে লাখ লাখ জনতার সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের গণহত্যার বিচার ও গণহত্যা বন্ধে কার্যকর সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শেষে বিশেষ মোনাজাতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনা করা হয়। এ সময় লাখ লাখ মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অশ্রুসজল নয়নে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকাবাসীর জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ সাহায্য কামনা করেন তারা।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’র উদ্যোগে আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করা হয়। সম্মিলিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ প্ল্যাকার্ড ও পতাকা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে উপস্থিত হন।
বেলা তিনটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই উদ্যানে প্রবেশ করতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। দুপুর ১২টা বাজার আগেই পুরো উদ্যান এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এরপর মাঠের চারিদিকের রাস্তা ও রমনা পার্ক, টিএসসিসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় লাখ লাখ মানুষ। তীব্র গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মসূচিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূলে খাবার পানি ও কেক বিস্কুট বিতরণ করেন অনেক দানশীল ব্যক্তি।
বেলা সোয়া ৩টায় বিখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফ আজহারীর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক। সবার পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এরপর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।
গণজমায়েতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন সেখানকার মানুষের অধিকার। গাজার মানুষের ওপর জুলুম বন্ধের দাবিতে আমরা প্রত্যেক বাংলাদেশি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।
ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, জনতার এই মহাসমুদ্র ফিলিস্তিন ও আল আকসার প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। ভৌগোলিকভাবে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকলেও আজকের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে বাস করে একটি করে ফিলিস্তিন। এসময় ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন! প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি! এসব স্লোগান দেন মিজানুর রহমান আজহারী।
ঘোষণাপত্র
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশীল, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন এবং জালিমের পরিণতি নির্ধারণ করেন। আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা, যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি। আজকে আমরা সমবেত হয়েছি মৃত্যু ভয়হীন ফিলিস্তিনের গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে।
তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ঐক্যবদ্ধ শপথ। এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করছি। আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, যেহেতু-জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে; আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়। বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল; এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরাইলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরাইলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
দাবিগুলো হলো-
১. জায়নবাদী ইসরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে।
২. যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে।
৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে; কারণ এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে, গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি। যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয় এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ; এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি; উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের উপর অর্পিত সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ এবং ইসরাইল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। সেহেতু আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই।
মুসলিম বিশ্ব ও ওআইসির প্রতি আহ্বান
১. ইসরাইলের সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে।
২. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৩. গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে।
৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।
কারণ হিসেবে ঘোষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গাজার রক্ত প্রবাহে আমরা লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ। এবং যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি
যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা। আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়, ইমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানী ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। বাংলাদেশের জনগণ গাজার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরবতা এই জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি অবজ্ঞার শামিল; সেহেতু আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই।
১. বাংলাদেশি পাসপোর্টে এক্সসেপ্ট শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে।
২. সরকারের ইসরাইলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে।
৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয় বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর।
৬. পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।
তিনি বলেন, কারণ রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত। আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।
আমাদের সর্বশেষ দাবি নিজেদের প্রতি একটি অঙ্গীকারনামা-এমন মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়-এটি ইমানের অংশ এবং আমরা জানি, বায়তুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয় আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে; এবং আমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল; এবং আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন, কাল আমাদের সন্তানেরা হয়ত এমন এক বাংলাদেশ পাবে, যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে; এবং গাজা আমাদের জন্য এক আয়না-যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা। সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য একটি অঙ্গীকার করছি-
১. আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরাইলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে।
২. আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ।
৩. আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে।
৪. আমরা বিভাজিত হবো না কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ-সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।
ঘোষণাপত্রের শেষকথায় মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা মনে রাখবো, গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না, তারা আমাদের প্রস্তুতি চান। শান্তি বর্ষিত হোক গাজার অধিবাসীদের উপর, তাদের উপর, যারা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যারা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যারা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে। শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহসহ সব শহীদের উপর, যাদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!
ঘোষণাপত্রে গাজার জনগণকে অভিনন্দন
গাজার জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়, আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানির মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন ইমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি আমরা, বাংলাদেশের মানুষ-শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দোয়া, হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদলেন লাখো মানুষ
মোনাজাতে বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান। একইসাথে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা মাহফুজুল হক, আহমদ আলী কাসেমী, জুনায়েদ আল হাবীব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। গণসমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে তারা ফিলিস্তিনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সৌজন্যে, দৈনিক নয়া দিগন্ত
Related News

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন সীমিত করার ফলে স্থানীয় জনগণের জীবিকার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেইRead More

আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নানা মত, ধর্ম ও রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাইRead More