Main Menu

বিজিবি ডিজি মিয়ানমার সীমান্তে মানবিক বিপর্যয় রোধের চেষ্টা করছে- দাবি বিজিপির

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেছেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। বিভিন্নভাবে তাদের আলোচনায় বারবার সেখানে (রাখাইনে) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছে তারা। সেখানে তাদের যে মিস ফায়ার চলেছে, সেটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বলে জানিয়েছে তারা। বিজিপির দাবি, এটা করে তারা সেখানে মানবিক বিপর্যয় রোধ করার চেষ্টা করছে। আগের তুলনায় রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। এটা রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ইতিবাচক।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বলা হয়েছে বাংলাদেশ অস্থায়ীভাবে তাদের শেল্টার দিয়েছেন শুধু মানবিক কারণে। এ বিষয়গুলো বলার পরে তারা এটা গ্রহণ করে আলোচনা করে কাজ করার কথা বলেছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। আমরা আশা করতেই পারি তাদের কার্যক্রম চলমান আছে।’

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে বিজিবি সদর দফতরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিজিবি মহাপরিচালক। গত ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী বিজিবি-বিজিপি সীমান্ত সম্মেলন শেষ দেশে ফিরে ব্রিফিং করলেন তিনি। এ সময় বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস ও ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবির, কক্সবাজারের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম উস সাকিব, পরিচালক (অপস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়েজুর রহমানসহ স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

করোনা মহামারির জন্য দুই বছর ১০ মাস পর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বিজিপি-বিজিবির অষ্টম সীমান্ত সম্মেলন হয়। এ সময় দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনে ১২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন থেকে ইতিবাচক বলা হলেও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন যে বলে সে গুরুত্ব সহকারে বলে। আর যিনি বিষয়টি শুনছেন, তিনিও কেমনভাবে নিচ্ছেন, সেটি বোঝা যায়। আমরা যেসব বিষয় বলেছি, তারা প্রতিটি জায়গায় অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। এসব গ্রহণ করায় আমরা ইতিবাচক মনোভাব দেখতে পেয়েছি এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তারা এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে। এই দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, এমন ভিডিও আমরা তাদের দেখিয়েছি। যুব জনগোষ্ঠীকে টেকনিক্যাল শিক্ষা দিয়ে ম্যানপাওয়ারে রূপান্তর করছি। যাতে তারা নিজেদের আবাসে ফিরে যাওয়ার পর নিজেদের চালিয়ে নিতে পারে।’

২০১২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ সামরিক বেসামরিকসহ ১৯ জন নিখোঁজ হন। এরমধ্যে বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ চার দিন পর ফেরত দিলেও লুট করা বিজিবির ১১ অস্ত্র আজও ফেরত দেয়নি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। যদিও অনেক ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ১০ বছরেও সেই ১১ অস্ত্র ফেরত পায়নি বিজিবি।’

সেই লুট করা অস্ত্র ফেরত পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা, জানতে চাওয়া হয় মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, ‘এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো অনেক পুরনো দিনের। এসব ঘটনা নিয়ে সমাধান আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে হঠাৎ করে সমাধান হয় না।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘যখন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সম্মেলন হবে, সেখানে ধীরে ধীরে আলোচনা হবে, সমাধান হবে বলে আশা করি। আলোচনা করাই হয় সমাধানের জন্য। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের ১৮ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় তারা। মাত্র চার জনকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব কড়াভাবে মিয়ানমারকে বলেছি। জেলেরা তো বোঝে না কোনটা আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাইন। তারা জীবিকার কারণে সেখানে ভোগান্তিতে পড়ে। ভুলবশত হলে সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করে তাদের দেওয়ার কথা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে লেখা আছে। খুব সিরিয়াস কোনও ইস্যু ছাড়া আমরা যেকোনও সমস্যা বসে মিটিং বৈঠকে সমাধান করতে পারি।’

সীমান্তে বিজিবির নায়েক খুন, অস্ত্র লুটের ঘটনার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কোনও সংযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে মাদক, বিচ্ছিন্নতাবাদী অপতৎপরতা রোধসহ সবকিছুর ব্যাপারে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স। আমাদের অবস্থান সব সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। শুধু আরসা বা আরএসও-এর মতো দুই একটি নামেই আমরা সীমাবদ্ধ যেন না থাকি। আমরা এদের কোনও কার্যক্রম সহ্য করবো না। সে জন্য আমরা সবসময় সাবধান আছি। ঘুমঘুম সীমান্তের কোনারপাড়ায় আমাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক ছয়টি পোস্ট রয়েছে। সারা দিন মিলে এক প্লাটুন বিজিবি ডিউটিতে রয়েছে। যাতে কোনও অপরাধী ও অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে।’

যৌথ টহলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল সাকিল বলেন, ‘সীমান্তে যৌথ টহলের বিষয়ে আশ্বাস নয়, সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা শিগগিরই শুরু হবে। আমি চাই এটাকে চলমান রাখা গেলে গ্রাউন্ড লেভেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি যোগাযোগ বাড়ানো গেলে এটি সম্ভব হবে, জোর দিয়ে বলছি আমি বাড়াবো।’

‘প্রতিটি ঘটনার পরে সীমান্তরক্ষী পর্যায়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছে। আমার মনে হয় যথাযথ পদক্ষেপের কারণেই পরবর্তীতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তারাও আশ্বস্ত করেছেন, তাদের এসব অভ্যন্তরীণ বিষয় খেয়াল রাখবেন’, বলেন তিনি। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও জোরালো, ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে। যার মাধ্যমে গ্রাউন্ড পর্যায়েই অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ জারি রাখতে চাই উল্লেখ করে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘উভয় দেশের সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান পরিচালনারও বিষয়ে একমত হয়েছে তারা। কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন যেন সীমান্ত অতিক্রম করে একে অপরের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, এ জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা রিয়েল টাইম ইনফো শেয়ার করতে পারবো।’

বিজিবি ডিজি বলেন, ‘আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপন করেছি। আমরা তাদের বলেছি, মিয়ানমারের যদি সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোন উড্ডয়নের প্রয়োজন হয় বা হেলিকপ্টার ইউটার্ন করার প্রয়োজন হয়, সে তথ্য আমাদের দিতে হবে। যেন আমরা ওই দিনগুলোতে লক্ষ রাখতে পারি যে কোনও ধরনের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ঘটছে কিনা। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, এ ধরনের কোনও ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে বেশ কিছু বাংলাদেশির হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাদের দেশের নাগরিকও হতাহতের শিকার হয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, অসতর্কতাজনিত বাংলাদেশ বা আপনাদের নাগরিকের সংস্পর্শে এলে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং তারা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা যৌথভাবে এটা পর্যবেক্ষণ করবো। আর স্থলমাইন অপসারণ ও কাঁটাতারের বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি সমাধান হলে আমরা যৌথভাবে স্থলভাগে টহল দিতে পারবো। আশা করি এর মাধ্যমে আমরা চোরাচালান, মানবপাচারের মতো সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হব। এ বিষয়ে আমরা মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।’

মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদক কোন অবস্থান থেকে কোন দিকে যাচ্ছে, এ বিষয়গুলো আমরা তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। তারাও পাওয়ার পয়েন্টে দেখিয়েছে। তারাও সমানভাবে মাদকে আক্রান্ত। তারা চান যৌথভাবে কাজ করে মাদকের রুট যেকোনও মূল্যে প্রতিহত করার। আমরা বিওপি পোস্টের মাধ্যমে আন্তযোগাযোগ বৃদ্ধি করতে বলেছি, যার মাধ্যমে আমরা মাদক কারবারিদের শনাক্ত করতে পারবো। মাদকের ফ্যাক্টরির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ধ্বংস করার জন্য বলেছি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় অবস্থান সব সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। সবগুলোর বিরুদ্ধেই জিরো টলারেন্স রয়েছে। এরা যেন আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য মিয়ানমার সীমান্তে ছয়টি পোস্টে এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন আছে, যেন সন্ত্রাসীরা পাসিং বা অন্যান্য অপরাধ না করতে পারে।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *