Main Menu

প্রফেসর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা

অধ্যাপক ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন কিন্তু কর্মে তাঁর উত্তরণ ঘটেছিল সমাজের শিক্ষক হিসেবে। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষের বিরল সম্মিলনে এক বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, অশিথিল প্রজ্ঞাবান-শিক্ষা অন্তঃপ্রাণ এ মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি আমাদের শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অন্তর্গত হয়েছেন।

সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়’-কে দেশের অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনন্য রাখতে প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

তিনি ছিলেন স্বপ্নচারী। ছিলেন প্রকৃতই অগ্রসর চিন্তার ধারক। ভারী তত্ত্বকথা বলতেন না। সহজ সরল কথাবার্তায় নিজের বিশ্বাসটুকু প্রকাশ করতে কুন্ঠাবোধ করেননি কখনো। জীবনাবরণে বিজ্ঞানের চর্চা করলেও ধর্মীয় অনুশীলন তাঁর দৈনন্দিন কার্যসূচির অংশ ছিল। প্রগতিশীলতা ও ধর্মভীরুতার সমন্বয় সাধন করে স্নিগ্ধ ও শুদ্ধভাবে জীবনযাপন করা যে সম্ভব তা তিনি দেখিয়ে গেছেন। তিনি পারিবারিকভাবে সূফীবাদে অনুরক্ত ছিলেন।

১৯৬২ সালে তিনি দিল্লিতে চিশতিয়া তরিকার অন্যতম সাধক হযরত শাহ ছনাউদ্দিন ফরিদী ফখরী সলিমী চিশতীর কাছে বয়াত গ্রহন করেন। আন্তর্জাতিক মানের একজন বরেণ্য পদার্থবিদ হয়েও আপাদমস্তক বাঙালি জীবনে অভ্যস্থ ছিলেন। সিলেটের সন্তান হিসাবে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। আবার শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের অনগ্রসরতা তাঁকে মর্মঃপীড়া দিতো। তাই ১৯৮৯ সালের ১ জুন ওলিকুল শিরোমণি হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর নামে স্থাপিত এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছেন। পরম মমতা দিয়ে, দূরদৃষ্টি দিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সুদৃঢ় ভীতে দাড় করিয়ে দিতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।

সিলেটবাসীর স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ করার স্বপ্নে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা, বিদেশে থাকা ভালো শিক্ষকদের সিলেটে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহন করেন। দলীয় রাজনীতির বাইরে একটি উচ্চ শিক্ষার তীর্থকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়াসে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের অনেক বিখ্যাত শিক্ষক যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ মাত্র চার বছরের এক কর্ম মেয়াদে শূন্য মাটিকে নিড়ানি দিয়ে, সার দিয়ে, বীজ ফেলে তিনি প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু যখন ক্ষেতে ফসল আসতে শুরু করে তখনই তাঁকে চলে যেতে হয়। ফসল রক্ষায় কীটনাশক দেয়ার সুযোগ তাঁর হয় না। তৎকালীন সরকার দলীয় বিবেচনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া শুরু করলেও শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ার অবকাশ ছিল। সেশনজট ও রাজনৈতিক হানাহানিমুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় সূচনাকাল থেকেই সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা চলছিল কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু কুচক্রী কর্মকর্তা দলবাজদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে উপাচার্য ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর পুনঃনিয়োগ প্রতিরোধে সুযোগ সন্ধানী কিছু প্রগতিশীলকে কাজে লাগানো হয়। সিলেটের স্থানীয় একটি দৈনিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ভিত্তিহীন এসব অভিযোগ তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপাচার্য পদে পুনঃনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। দলীয় বিবেচনায় তখন নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়।

প্রফেসর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী তাঁর পূর্ববর্তী কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে এক স্বপ্নচারী শিক্ষাবিদের মাঝপথে থেমে যেতে হয়। ১৯৯৩ থেকে ২০০৭। প্রায় ১৪ বছর নিজের হাতে তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে তিনি উপেক্ষিত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে তাঁকে দায়সারা আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০০৭ সালে তাঁর প্রিয় ছাত্র প্রফেসর আমিনুল ইসলাম শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগদান করলে ১৪ বছর পর প্রিয় ক্যাম্পাসে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হোন। ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে সমাবর্তন বক্তা হিসাবেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সমাবর্তন বক্তব্যে তিনি উচ্চশিক্ষার পরিমণ্ডলে বিরাজমান সংকটের জন্য দেশের সর্বগ্রাসী বিকৃত রাজনীতির সাথে ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের সম্পৃক্ততাকে দায়ী করেন। তিনি ছাত্র ও শিক্ষকদের সত্য, ন্যায় ও প্রগতির স্বপক্ষ্যে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার কথা বলেন।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফুলবাড়ি গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী মাত্র সাত বছর বয়সেই মাতৃহারা হন। ছোটকাল থেকেই তাঁর পড়ালেখায় মনযোগ ছিল। শৈশবে বইটিকর পাঠশালা থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। ১৯৪১ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তদানন্তীন সমগ্র আসাম প্রদেশে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে পুরো অঞ্চলকে আলোকিত করেন। পরে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে এমসি কলেজ থেকে আইএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৫৫ সালে এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরের বছরই রাজশাহী কলেজের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারে রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসেবে গবেষণাকাজে জড়িত হন। ১৯৫৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। পরে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ‘এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফী’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফী বিষয়ে গবেষণা ছাড়াও ‘হিউম্যান ইনসুলিন’ আবিষ্কার তাঁর মৌলিক আবিষ্কার। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বীকৃৃত জার্নালে তাঁর ৪০টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। পালন করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা। প্রফেসর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী একজন দক্ষ প্রশাসকও। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান, শহীদ হাবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির সদস্য, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের প্রশাসক, সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্যসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিল সদস্য, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রফেসর ছদরুদ্দিন চৌধুরী এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ডিন অব স্টাডিজ (একাডেমিক ভাইস চ্যান্সেলর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে যখন স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে সবকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ হয়ে যায় তখন প্রফেসর ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর নিজস্ব জায়গায় ক্যাম্পাসহ সব শর্ত পূরণ করে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

শিক্ষার সাথে ছদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর আজীবনের সম্পর্ক নিয়ে নিজের ‘আত্মকথা’র ভূমিকা পর্বে তিনি লিখেছেন, “সেই তিরিশের দশকে যে দামাল শিশু স্লেট-পেন্সিল আর বুক ভরা স্বপ্ন ও কৌতূহল নিয়ে ক্ষুদ্র পাঠশালার শ্রেণিকক্ষে ভীরু মনে পা রেখেছিল, তখন কে জানত নিজের বুকভরা স্বপ্নভাণ্ডারকে লালন করতে, সে জীবনভর শ্রেণিকক্ষকেই বেছে নেবে! আজ গর্বে আমার বুক ভরে যায় যখন দেখি কত না ঐশ্বর্যের সন্ধান আমি পেয়েছি-কত বর্নাঢ্য ব্যাক্তিত্বের সান্নিধ্যে নিজেকে আলোকিত করার সুযোগ পেয়েছি! সেই সঙ্গে সেই আলোক শিখাকে অন্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে নিজের সাধ্যমত চেষ্টাও করেছি।” তাঁর এ চেষ্টা শুধুমাত্র শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেই অব্যাহত ছিল না। নিজের ‘উপাচার্য’ পরিচয়ের গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে আমন্ত্রণ পেলেই তিনি ছুটে যেতেন, অংশ নিতেন বিভিন্ন প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে।

২০০৬ সাল থেকে সিলেট অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় গঠিত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাপা, সিলেট শাখা সিলেট বিভাগের পরিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখে।

সুদীর্ঘ ৫৮ বছর শিক্ষকতা জীবনে তিনি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো ও ১৯৯৪-৯৬ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির সভাপতি, ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অব ক্রিস্টালোগ্রাফীর সদস্য ছিলেন। প্রফেসর ছদরুদ্দিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ইন কমপিউটিং মেথডস, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোতে সপ্তম ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অব ক্রিস্টালোগ্রাফী, ইটালিতে ন্যাটো অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ইন ক্রিস্টালোগ্রাফী, হল্যান্ডের আমস্টারডামে দশম আর্ন্তজাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের ইয়কর্ -এ ন্যাটো অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ইন ডাইরেক্ট মেথডস্, কানাডার অটোয়াতে ১২তম আন্তর্জাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, ভারতের দিল্লিতে কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সভা, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজের বার্ষিক সাধারণ সভা, যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের ১৫তম সভায় সভাপতি হিসেবে, ১৭তম আন্তর্জাতিক ক্রিস্টালোগ্রাফী কংগ্রেস, তুরস্ক, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও ভারতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ও সেমিনারে অংশগ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালী, নেদারল্যান্ড, সিরিয়া, সৌদি আরব, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।

তাঁর লেখা বিএসসি (অনার্স) শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞান বইটি বাংলা একাডেমি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া উৎস প্রকাশনী থেকে ২০১০ সালে আত্মকথা নামে আরও একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬০ সালের ২৫ জুন আপন ফুফাতো বোন খালেদা চৌধুরীর সাথে বিবাহ হয়। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর বড় মেয়ে নাসেহা চৌধুরী, ছোট মেয়ে নাইমা চৌধুরী ঢাকায় বসবাস করছেন। মেজো মেয়ে প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী বর্তমানে শাবিপ্রবির লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর। নাসেহা চৌধুরীর স্বামী বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমদ। ড. নাজিয়া চৌধুরীর স্বামী প্রয়াত এডভোকেট মইনুদ্দীন আহমদ জালাল ছিলেন- সিলেটের একজন স্বনামধন্য নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক। নাইমা চৌধুরীর স্বামী রুম্মান ইউনুস একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

সহজ সরল জীবনযাপনের অধিকারী অধ্যাপক ছদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রকৃত অর্থে মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল ধ্যানধারণার অধিকারী একজন জ্ঞানতাপস। ২০১৬ সালের ২৩ জুন তাঁর কর্মময় জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটবাসী অমূল্য এক অভিভাবককে হারায়। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ফুলবাড়ি গ্রামের বড় মোকামে পারিবারিক কবরস্থানে সহধর্মিণী খালেদা চৌধুরীর পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

*আব্দুল করিম কিম। সংগঠক, সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন, সিলেট।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *