Main Menu

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

আম্পানের দগদগে ঘা এখনও শুকোয়নি। গত বছর করোনা সংক্রমনের শুরুতেই আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান। সেই আম্পানের বর্ষপূর্তি হতে না হতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেই পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা আরও একটি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। শুরুতে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, আগামী সপ্তাহের ২২ থেকে ২৩ মের দিকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এসময় তা ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপে রূপ নেবে। পরে এই নিম্নচাপ ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াস’। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কোন কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে তা আরও কয়েকদিন পর সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার পাশাপাশি আরব সাগরে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। তার নাম হবে গুলাব। ইয়াস ওমানের দেওয়া নাম, গুলাবের নামকরণ করেছে পাকিস্তান। দুটি নিম্নচাপ ঘনিভূত হচ্ছে উত্তর ভারত মহাসাগরের ক্রান্তীয় ক্ষেত্রে। একটি নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে, আরেকটি আরব সাগরে। বঙ্গোপসাগরে ঘণিভূত নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে ২৩ থেকে ২৫ মের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায়। এর অভিমুখ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে। পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘণিভূত নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে প্রাথমিকভাবে ধেয়ে আসতে পারে বাংলাদেশের দিকে। আর এই ঘূর্ণিঝড় যদি উত্তর-পশ্চিম অভিমুখ বদল করে তবে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএচডি গবেষক মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ২৬ মে সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ মে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা নির্দেশ করছে মডেলগুলোতে। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও কলকাতার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ইউরোপীয় মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা উপকূল দিয়ে প্রবেশ করবে। অন্যদিকে কানাডিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল বলছে, নোয়াখালী উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। একটি মডেলে দেখা গেছে ২৩ মে, আরেকটি মডেলে দেখা গেছে ২৪ মে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমে নিম্নচাপ, তারপর লঘুচাপ এবং ২৪ ঘণ্টায় শক্তি অর্জন করে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে।

তিনি বলেন, এখনও পাঁচ-ছয়দিন সময় আছে, ফলে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এবার আমেরিকা ও জার্মানির মডেল অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে ঠিক যেই পথে ঘূর্ণিঝড় আম্পান স্থলভাগে প্রবেশ করেছিল ২০২০ সালের মে মাসে। সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রের যে দিকে তাপমাত্রা বেশি থাকে, সে দিক দিয়ে যায়। এই মুহূর্তে মিয়ানমার ও চট্টগ্রাম উপকূলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেশি, সাড়ে ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। উড়িষ্যা উপকূলে সমুদ্রের তাপমাত্রা সাড়ে ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রায় দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পার্থক্য। গতবার আম্পান অগ্রসর হয়েছিল উড়িষ্যার ওপর দিয়ে। এবার দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এবারের ঘূর্ণিঝড়টি মধ্যম মানের হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় যেখানে সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকে সারাসরি উত্তর-পশ্চিমে গেলে এটি শক্তিশালী হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই পথে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেশি থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হবে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ২৫ থেকে ২৬ মে ৫-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস হতে পারে। ২৬ মে এমনিতে পূর্ণিমা থাকবে, পূর্ণিমার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে জলোচ্ছাসের উচ্চতা স্বাভাবিক ভাবেই ২ থেকে ৩ ফুট বেশি থাকে। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশের বিভিন্নস্থানে তাপপ্রবাহ চলছে। এ ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া সাগরে লঘুচাপ তৈরির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশির ভাগই আঘাত হেনেছে মে মাসে। ১৯৬০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩৬টি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে ১৫টি এসেছে মে মাসে। আর গত এক যুগে (২০০৮-২০) ৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সাতটিই হয়েছে মে মাসে। বাকি দুটির একটি জুলাইয়ে, অন্যটি নভেম্বর মাসে হয়েছে।

সৌজন্যেঃ সমকাল






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *