Main Menu

কাতারভিত্তিক চ্যানেল বাংলাদেশে আলজাজিরা বন্ধের বিপক্ষে ৫ অ্যামিকাস কিউরি

বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধ ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ ডকুমেন্টরি সরাতে আদালত আদেশ দিতে পারে কি না, সে বিষয়ে মতামত দিয়েছেন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সুপ্রিম কোর্টে ছয়জন সিনিয়র আইনজীবী।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুনানিতে অংশ নিয়ে পাঁচজন অ্যামিকাস কিউরি বলেছেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে একজন ব্যক্তির রিট করার সুযোগ নেই। আর রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। আর সংক্ষুব্ধ না হলে সংবিধান ও আপিল বিভাগের গাইডলাইন অনুযায়ী তিনি রিট করতে পারেন না।

অ্যামিকাস কিউরিরা বলেছেন, এটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাজ। এখানে বিটিআরসি আছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। তবে অপর একজন অ্যামিকাস কিউরি আবদুল মতিন খসরু বলেছেন, ডকুমেন্টরি সরাতে আদালত আদেশ দিতে পারেন। এটা না করলে তারা আবারো করতে পারে।

সোমবার বিচারপতি মো: মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি এ অভিমত দেন।

সোমবার শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় আগামী বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেবেন।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত একজন অ্যামিকাস কিউরিকে প্রশ্ন করেন, বিচারপতিরাও দেশের সন্তান, এখানে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি যদি বিপদগ্রস্ত হন, আদালত সুয়োমোটো রুল জারি করতে পারে কি? জবাবে অ্যামিকাস কিউরি প্রবীর নিয়োগী বলেন, কাউকে কোর্টে আবেদন নিয়ে আসতে হবে। তবে এ পর্যায়ে এই রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।

সোমবার অ্যামিকাস কিউরি সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু, সিনিয়র আইনজীবী কামাল উল আলম, প্রবীর নিয়োগী ও আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আদালতে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন খসরু ও ড. শাহদীন মালিক আদালতে লিখিত বক্তব্য রাখেন।

অ্যামিকাস কিউরি কামাল উল আলম আদালতে বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সরকারই ব্যবস্থা নেবে। নির্বাহী বিভাগ আদেশ দেবেন। আদালত কেন বার্ডেন করবে? এই রিট আবেদনের আগে ডিমান্ড অফ জাস্টিস (বিবাদীদের নোটিশ দেয়া) প্রয়োজন ছিল। এই আবেদন গ্রহণ করা হলে তা আপিল বিভাগের ১৪টি গাইডলাইনের বাইরে চলে যাবে। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত প্রশ্ন করেন আমরা দেশে (আলজাজিরার) সম্প্রচার বন্ধের আদেশ দিতে পারি কি না?

জবাবে কামাল উল আলম বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে পারবেন না। টেরিটোরির বাইরে যেতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তো ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন আছে। কি সম্প্রচার করা যাবে না তা আইনেই বলা আছে। জনস্বার্থে সরকার যেকোনো নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে পারে।

তিনি বলেন, এক ঘণ্টার ডকুমেন্টরিতে সরকারপ্রধানকে ম্যালাইন করা হলে, সরকারকেই ম্যালাইন করা হয়। এজন্য সরকারই ব্যবস্থা নিতে পারে। এখানে রিট আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ নন। আর সংক্ষুব্ধ না হলে রিট আবেদন করতে পারেন না।

অ্যামিকাস কিউরি ফিদা এম কামাল বলেন, আলজাজিরার ডকুমেন্টরি সরকারই বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তথ্য-উপাত্ত ব্লক করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনে বিটিআরসিকে পরিষ্কার ক্ষমতা দেয়া আছে। এই ডকুমেন্টারি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দিয়েছে। অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলে গেছে। এ খানে রিট আবেদনকারী দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি কিভাবে সংক্ষুব্ধ। আলজাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে। এটা সরকারের অগোচরে হয়নি। সরকার দেখেছে। প্রতিবাদ করেছে। সরকার যদি মনে করত বন্ধ করা দরকার, সেখানে তাদের ম্যাকানিজম আছে।

অ্যামিকাস কিউরি আব্দুল মতিন খসরু আদালতে লিখিত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ডকুমেন্টারি সরাতে আদালত আদেশ দিতে পারেন। এটা না করলে তারা আবারো করতে পারে।

অ্যামিকাস কিউরি ড. শাহদীন মালিক বলেন, আপিল বিভাগের ১৪টি গাইডলাইনের আলোকে রিট আবেদনকারীকে আবেদনের অনুমতি দেয়ার স্কোপ নেই। এ আবেদনের আগে আবেদনকারীকে বিবাদিদের নোটিশ দিতে হবে। আর তাছাড়া বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে।

অ্যামিকাস কিউরি প্রবীর নিয়োগী আদালতে বলেন, এখানে ব্যক্তির রিটের সুযোগ নেই। এটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাজ, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে আদালত ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের ছয়জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন। অ্যামিকাস কিউরিদের কাছে আদালতে প্রশ্ন ছিল, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে আদালত থেকে কোনো আদেশ দেয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না? কোনো আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আলজাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যমে থেকে বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না?

এরআগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে আদালত আলজাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একইসাথে রিটে সংবাদমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি আলজাজিরায় বাংলাদেশ নিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সরকারিভাবে এ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *