Main Menu

ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারণে উগ্রবাদে জড়িয়েছি, বললেন সিলেটের শাওন

ধর্মীয় অপব্যাখ্যার শিকার হয়ে উগ্রবাদী এক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজির আহমেদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে আসা সিলেটের তরুণ শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত। পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘নব দিগন্তের পথে’ নামে এক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে চিকিৎসক স্ত্রী নুসরাত আলী জুহিসহ আত্মসমর্পণ শেষে উগ্রবাদের অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়া এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসার গল্প অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের শোনান শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত। শাওন ও জুহির সঙ্গে আরও সাত তরুণ-তরুণী বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইজিপির কাছে। পরে তাদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে তাদের আবার সমাজের মূল ধারায় স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়েতেই সিলেটের তরুণ শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত জড়িয়ে পড়েছিলেন উগ্রবাদী এক সংগঠনে। পরে ডাক্তার স্ত্রী নুসরাত আলী জুহিকেও সেই জালে জড়িয়ে নেন। সংগঠনের নির্দেশে চার বছর আগে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পরিবার থেকেও আলাদা হয়ে যান। কিন্তু সে সবই যে ‘ভুল’ ছিল, এখন তা বুঝতে পারছেন তারা।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ‘ধর্মীয় ব্যাখ্যায়’ আকৃষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে তিনি হিযবুত তাহরীর যুক্ত হন। কয়েকজন বন্ধুকেও ওই সংগঠনে যুক্ত হতে উৎসাহ দেন।

২০১১ সালে মেডিকেল ছাত্রী জুহির সাথে বিয়ে হয় শাওনের। স্বামীর উৎসাহে জুহিও একসময় ওই সংগঠনে যোগ দেন জানিয়ে শাওন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতার কাজে তারা জড়াননি। ২০১৬ সালের পর থেকে সংগঠন থেকে তাদের বলা হয়, পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তারা ঢাকার এসে থাকতে শুরু করেন।

এদিকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর … আমার স্ত্রী একজন চিকিৎসক, কিন্তু এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে থাকতে তার জীবনে অশান্তি আর গ্লানি নেমে আসে। এক কথায় আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। তাছাড়া আমার দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যত… যোগ করেন তিনি।

শাওন বলেন, একটা সময় আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। বুঝতে পারি, আমি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার শিকার। আমার ভেতরে নতুন করে বোধোদয় হয়। তখন পরিবারের সাথে আলোচনা করি, নতুন করে বেঁচে থাকার কথা বলি… তারপর এখানে আসা।

শাওন-জুহির পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব সদরদপ্তরে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। চার বছর পর ছেলে আর ছেলের বউকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শাওনের বাবা শওকতুর রহমান।

নিজে একজন ব্যাংকার ছিলেন জানিয়ে শওকত বলেন, তার ছেলে কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেল, তিনি তা বুঝতেও পারেননি।

কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, কারো সন্তান যাতে এভাবে জঙ্গিবাদে না জড়ায়, সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একে একে আত্মসমর্পণ করেন আবিদা জান্নাত আসমা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), সাইফুল ইসলাম (৩১), আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬), মো.সাইদুর রহমান (২২) ও আবদুর রহমান সোহেল (২৮)।

আত্মসমর্পণ করা এই তরুণ-তরুণীদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তাদের কেউ ডাক্তার, কেউ আইটি বিশেষজ্ঞ, কেউ ছাত্র। কিন্তু তারা জেএমবি বা আনসার আল ইসলামের মত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে গিয়েছিলেন।

এদিকে আত্মসমর্পনের পর গ্রেপ্তার করে শাস্তির পথে না গিয়ে এখন তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই তরুণ-তরুণীদের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখছিল।

র‌্যাব তাদের এই কর্মসূচিকে বলছে ‘ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’। ঢাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পেশার ধরণ অনুযায়ী এই তরুণ-তরুণীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *