Main Menu

কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর : যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৩

অনলাইন ডেস্কঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাথে যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমানের দ্বন্দ্বের কারণে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত। শনিবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তথ্য জানান তিনি। এই ঘটনায় তিন যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার সাথে চারজন জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে স্থানীয় কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান (৩০), যুবলীগ নেতা সবুজ হোসেন (২৮), হৃদয় হোসেন (২৫)। এঘটনার সাথে জড়িত যুবলীগ নেতা বাচ্ছু (৩২) পলাতক রয়েছে।

তিনি আরো জানান, শুক্রবার পুলিশ সন্দেহবশত কলেজের নাইট গার্ডসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ দুর্বৃত্ত ভাস্কর্য ভেঙে পালিয়ে যায়। তিনি বিষয়টি দেখতে পেয়ে অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে জানান। কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান।

শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামিদের উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন কলেজের প্রিন্সিপাল হারুন অর রশিদ। পুলিশ রাতে আসামিদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এদিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা দেখতে পান বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের মুখের ডান পাশের চোয়াল এবং নাকের পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকদিন আগে দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কলেজ কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভপতি আনিসুর রহমান এবং নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছির। রাতেই তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এটি এম আবুল মনছুর মজনু, সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি কুমারখালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহসান বরুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হোসেন মানু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

প্রসঙ্গত, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি ‘বাঘা যতীন’ নামেই সবার কাছে সমধিক পরিচিত। তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। তার জন্ম ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায়। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *