Main Menu

মিয়ানমারে নির্বাচন কাল: রোহিঙ্গাদের ভোট নেই

মিয়ানমারে আগামীকাল ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন। অর্ধশতকের মধ্যে দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য এটা বড় পরীক্ষা। দেশটির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছোট-বড় ৯৩টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু, ক্ষমতাসীন এনএলডি এবং প্রধান বিরোধী দল- ইউএসডিপি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। গণমাধ্যমের পূর্বাভাস, আবারো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ক্ষমতায় আসছেন অং সান সু চি।

তবে, নির্বাচনী প্রচারণায় করোনা শিষ্টাচার না মেনে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এ ছাড়া, সংঘাতপ্রবণ রাখাইন-শান-কাচিন-মন ও বাগো এলাকায় বাতিল করা হয়েছে ভোটগ্রহণ। এতে ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হচ্ছেন ১৫ লাখ মানুষ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

দীর্ঘ ৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে কার্যত দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তবে নির্বাচনটি নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা। মিয়ানমার সামরিকতন্ত্রের পথ থেকে বাঁকবদল করে গণতন্ত্রের দিকে নতুন যাত্রা শুরু করেছিল ২০১০ সালের নভেম্বরে, কারণ সে বছরেই দীর্ঘ বন্দিত্ব শেষে মুক্তি দেয়া হয়েছিল গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠা নেত্রী অং সান সু চিকে।

তবে ২০১৫ সালের প্রথম অবাধ নির্বাচনে বড় বিজয় পাওয়া সেই সু চিই এখন আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওঠা রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের জবাব দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কোনো কোনো মহলের অভিযোগ তিনি এমনকি ওই অপরাধের যৌক্তিকতা প্রমাণেরও চেষ্টা করছেন।

আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গত কয়েক বছরে এটিই মিয়ানমারের বিষয়ে সবচেয়ে বড় ইস্যু হলেও এবারের নির্বাচনে সেটি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, নাকি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গিই রাজনৈতিক দলগুলো বিনাপ্রশ্নে গ্রহণ করে, তার জবাব পাওয়া বেশ কঠিন।

দেশটির ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) নেতা উ থান থে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল হলো এই ইউএসডিপি, যারা দেশটির সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ব্যাপক একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল ইউএসডিপি- যে নির্বাচনে অংশ নেয়নি সু চির দল।

এবারের নির্বাচনের প্রচারণায় ইউএসডিপি তাদের প্রতিপক্ষ এনএলডির বিরুদ্ধে যেসব কথা জোরেশোরে বলছে তার মধ্যে একটি হলো যে ‘এনএলডি বাঙালি মুসলিমদের স্বাগত জানিয়েছে।’ মিয়ানমারে সাধারণত রোহিঙ্গাদের বোঝাতে ‘বাঙালি মুসলমান’ এই শব্দ যুগল ব্যবহার করা হয়।

এএফপির একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার ডট নেটে, যেখানে ইয়াঙ্গুনভিত্তিক বিশ্লেষক খিন ঝ উইন বলেছেন যে রোহিঙ্গা বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাধারণত মিয়ানমারে কোনো সমস্যা হয় না। দেশটির সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ মুসলমান এবং তাদের কোনো মূলধারার রাজনৈতিক দল নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে তাদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ করে থাকেন দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠী।

তবে এসব ইস্যু ছাপিয়ে সেখানে বিতর্ক হচ্ছে খোদ নির্বাচন আয়োজন নিয়েইÑ কারণ এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মিয়ানমার টাইমস গত ৪ নভেম্বর জানিয়েছে যে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী নিজেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন বা (ইউইসি) সক্ষম কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। যে সামরিক বাহিনী ১৯৬২ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল, তারাই এখন বলছে যে নির্বাচনের দুর্বলতাগুলো এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি করতে পারে।

যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নির্বাচনকে যেসব কারণে অস্বচ্ছ বলছে তার মধ্যে একটি হলো, উত্তর রাখাইনের লাখ লাখ মুসলমানকে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সাথে সেনা অধিনায়কদের ছবি, হেগের আদালতে যাওয়ার পর এমন ছবি দেখা গিয়েছিল। আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘দি ডিপ্লোম্যাট’ বলছে যে এনএলডিকে ভোট দেয়া মানে সু চিকে দেয়া, কারণ আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার কারণেই দেশটিতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, সে সম্পর্কে কেউ স্পষ্ট ধারণা করতে পারছে না। ২০১৫ সালে রাখাইনের ভোটাররা রাখাইন জাতীয়তাবাদী আরাকান ন্যাশনাল পার্টিকে নির্বাচিত করেছিল রাখাইন স্টেট পার্লামেন্টে। কিন্তু এনএলডি প্রেসিডেন্ট এটিকে আমলে না নিয়ে নিজ দলের একজনকে চিফ মিনিস্টার করেছিলেন রাখাইন রাজ্যে।

দ্য কনভারসেশন ডট কম এক রিপোর্টে একটি অংশের শিরোনাম করেছে ‘অধিকারহীন গণতন্ত্র’। এই রিপোর্টে উঠে এসেছে যে রোহিঙ্গা ইস্যুকে আড়ালেই রাখা হয়েছে, বরং আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে অং সান সু চি প্রমাণ করেছেন যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি (সেনাবাহিনীর প্রতি) তার সহযোগিতার হাতই বাড়িয়ে রেখেছেন।

তবে নির্বাচনকে যতই অবাধ ও নিরপেক্ষ বলা হোক না কেন, যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিধন অব্যাহত থাকবে তত দিন গণতন্ত্রের পথে যাত্রা দুর্বলতর হবে- এমন মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টটিতে। নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আগেই বলেছে যে আসন্ন এই নির্বাচন ত্রুটিতে ভরা। তারা বলছে, সেনাবাহিনীর জন্য আসন সংরক্ষিত রেখে এবং গণমাধ্যমে অবাধ চলাচলের সুযোগ না দিয়ে যে নির্বাচন করা হচ্ছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। সংস্থাটি আরো অভিযোগ করেছে যে দেশটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকেও তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

সূত্রঃ আলজাজিরা ও বিবিসি






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *