Main Menu

লাদাখে মুখোমুখি অবস্থানে দুই দেশের সেনারা

সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতকে কড়া বার্তা দিয়েছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের দুইটি পৃথক সম্পাদকীয় ভাষ্যে বলা হয়েছে, ভারতের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চায় না চীন। তবে আক্রান্ত হলে তারা বসে থাকবে না। বেইজিং বলছে, করোনাভাইরাস ও অর্থনীতির বিপর্যয়ের ব্যর্থতা আড়াল করতেই ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার সীমান্তে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্লোবাল টাইমসের দাবি, চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধে বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রাখলেও কোভিড-১৯ মহামারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ভারত। করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা দেশটি যদি সীমান্তে আবার সঙ্ঘাতে জড়ায় তাহলে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছর পড়ে যেতে পারে ৩০ শতাংশেরও বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংক্রমণের দেশে পরিণত হয়েও ভারত এই বেপরোয়া আচরণ করেছে।

চীনের অভিযোগ, ভারতীয় সেনারা কেবল আরো একবার অবৈধভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) অতিক্রমই করেনি তারা এমনকী আলোচনার জন্য যাওয়া চীনা টহল বাহিনীর ওপর সতর্কতামূলক গুলিবর্ষণ করেছে। যদিও দুই পক্ষ আগেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। একটি সম্পাদকীয় ভাষ্যে বলা হয়েছে, ভারতের সাথে সীমান্তে যুদ্ধ চায় না চীন। তবে যদি ভারত চীনের এই সদিচ্ছাকে দুর্বলতা মনে করে আর চীনা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানো অব্যাহত রাখে, তাহলে পাল্টা গুলি চালাতে পিছপা হবে না বেইজিং। যুদ্ধ এড়াতে গিয়ে চীন নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে না।

ওই ভাষ্যে আরো বলা হয়েছে ‘আমরা ভারতকে গুরুতরভাবে সতর্ক করছি। তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ! তোমাদের সামনের সারির সেনারা সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমাদের জাতীয়তাবাদী জনমত সীমা অতিক্রম করেছে! তোমাদের চীন নীতি সীমান্ত পেরিয়েছে! তোমরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে চীনা সেনাবাহিনী ও সেখানকার মানুষকে উসকানি দিচ্ছ। খাদের মুখে দাঁড়িয়ে তোমরা বিপজ্জনক কসরত দেখাচ্ছ!’

দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনা করে গ্লোবাল টাইমস বলছে, ভারত নিশ্চিভাবে ভুল পথ বেছে নিয়েছে। ভাইরাস মোকাবিলার মৌলিক এবং জরুরি কাজ ফেলে রেখে তারা চীনের সাথে সঙ্ঘাত শুরু করতে চাইছে। যেখানে পরিষ্কারভাবে তাদের জয়ের সম্ভাবনা শূন্য।

গ্লোবাল টাইমসের দাবি, গত ৪০ বছর ধরে মূলত শান্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকার পর ভারত সম্প্রতি ধীরে ধীরে চীনের প্রতি উসকানি বাড়ানো শুরু করে। অভ্যন্তরীণভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে ভারতের নেতৃত্ব সীমান্ত বিরোধকে ব্যবহার করে মহামারী নিয়ন্ত্রণে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে চাইছে। একই সাথে দিল্লি হয়তো আন্তর্জাতিক পরিসরকেও সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে চীনা উন্নয়নকে প্রতিহত করতে চাইছে। আর সে কারণেই হয়তো ভারত আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করেত উৎসাহ পাচ্ছে।

গ্লোবাল টাইমস বলছে, জনবহুল দেশ হিসেবে ভারত গত কয়েক বছর ধরে এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এবং ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের পথে এগুচ্ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিল্লির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার সবই এখন বিফলে যাচ্ছে। অন্য বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মতো ভারতের মৌলিক শিল্প ভিত্তি, অর্থনৈতিক কাঠামো এবং পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। চীনের সাথে সীমান্ত সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়লে থাকলে নিশ্চিতভাবেই ভারতের বাজার ছেড়ে যাবে বৈদেশিক পুঁজি আর নিশ্চিতভাবে মোদির উচ্চাকাক্সক্ষী ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’র প্রচারণা স্বপ্নই থেকে যাবে।

লাদাখে মুখোমুখি সেনারা

দুই পক্ষের সমঝোতা অনুযায়ী প্রায় ৪৫ বছর ধরে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি প্রথমবারের মতো লাদাখ সীমান্তে গুলি ছোড়া হয়েছে, তার পর থেকে সেখানে ভারতীয় ও চীনা বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। গত বুধবার পক্ষ দু’টি ওই সীমান্তে মাত্র কয়েকশত মিটার দূরে অবস্থান করছিল বলে ভারতীয় কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

সোমবার শূন্যে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনার জন্য পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দু’টি একে অপরকে দায়ী করেছে। এই গুলিবর্ষণের ঘটনায় অনির্ধারিত ওই সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার প্রটোকলের লঙ্ঘন ঘটে। লাদাখ সীমান্তের প্যাংগং সো হ্রদের দক্ষিণ পাশের অন্তত চারটি স্থানে ভারত ও চীনের সেনারা খুব কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে আছে বলে নয়াদিল্লির একজন সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। উভয় দেশই এই হ্রদের মালিকানা দাবি করে আসছে।

তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ, তবে উভয় বাহিনীই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার নিজ নিজ পাশে অবস্থান করছে।’ গ্লোবাল টাইমস ও রয়টার্স






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *